সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
বর্বরোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় আজ। এই মামলার বর্তমান ৪৯ জন আসামির মধ্যে ৩১ জন কারাগারে ও ১৮ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালায় সন্ত্রাসী বাহিনী। গ্রেনেড হামলার পেছনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও জোট সরকারের মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ সমারিক কর্মকর্তারা জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। সে দিনের গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। গ্রেনেডের স্পিন্টারের আঘাতে হাজার হাজার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী আহত হয়ে এখনো যন্ত্রণা ভোগ করছে।
দীর্ঘ ১৪ বছর প্রতীক্ষার পর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণার জন্য ১০ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।
রায়কে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনের পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। রায়ের দিন বিএনপি জামায়াত কোন প্রকার নাশকতার চেষ্টা রকলে তা রাজপথে থেকে সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। এদিকে ন্যায় বিচার না পেলে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। তাদের দাবি গ্রেনেড হামলার সাথে তারেক রহমান জড়িত নয়। বিএনপি আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের জন্য নারায়ণগঞ্জে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান রয়েছে।
এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র নিজেদের অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, রূপগঞ্জে বিএনপি জামায়াত নাশকতা করলে জনগণকে সাথে নিয়ে তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে। জনগণের জান মাল রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি ছাত্রলীগ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ মাঠে থাকবে। কোন ক্রমেই নাশকতাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট যে নৃশংসতম গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি। আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের প্রতি আহবান জানাবো, এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেন কোন অপশক্তি মাথাচড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সজাগ থাকতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই জানান, ‘২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়কে ঘিরে যেন কোন অপশক্তি অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সতর্কবস্থানে থাকবে নেতাকর্মীরা।’
মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বুধবার আমরা মাঠে না থাকলেও সবাই সতর্ক অবস্থানে থাকবে। রায়কে ঘিরে কেউ পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের প্রশাসন প্রতিহত করবে।’
মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. খোকন সাহা জানান, ‘গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে বিএনপি জামাতের অরাজকতা রোধে নেতাকর্মীদের চোখ-কান খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
এব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, যদি ন্যায় বিচার হয় তাহলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ খালাশ পাবেন আর যদি প্রধাণমন্ত্রীর অফিস থেকে রায় লিখে দেয়া হয়, তাহলে কি হবে আমরা বলতে পারছি না। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোন ন্যায় বিচার আমরা প্রত্যাশা করি না।
যে দেশে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আটকে রেখে পঙ্গু করে দেয়, সে দেশে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করা যায় না।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এ বিষয়ে বলেন, আমরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার আশা করি কিন্তু বুধবারের রায়ে কি হবে তা গত কয়েকদিনে আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্যেই জনগন বুঝে গিয়েছে। লোক দেখানো পরিকল্পিত রায় বাস্তবয়নের প্রকৃয়া চলছে। তবে কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক রায় জনগন মেনে নেবে না এবং দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দেবে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এ বিষয়ে বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকার যা ইচ্ছা তাই করছে। আইন আদালত বা জনমতের কোন তোয়াক্কাই তারা করছে না। গ্রেনেড হামলা মামলায় যে তারেক রহমানকে দোষী করা হবে তা এদেশের দুধের বাচ্চাও আরো কয়েক বছর আগে থেকে জানে। নাটকের স্ক্রিপ্ট কয়েক বছর আগে লেখা, ১০ তারিখে মঞ্চস্থ হবে মাত্র। দেশবাসী এই নাটক সম্পর্কে অবহিত আছে। সুতরাং আমাদের নেতা তারেক রহমান বা আমরা ভীত নই। আগে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্র ফিরে এলে এই সব নাটুকে সাজার বালাই থাকবে না ইনশাল্লাহ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ২১ আগষ্টের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমানকে জড়িয়ে কোন প্রহসনমূলক, সরকারি তাবেদারি রায় দিলে অবৈধ শাসকদের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।